বিভাবনায় লিখতে পারেন যে-কেউ

বাংলা ভাষা, ব্যাকরণ, উচ্চারণ বানান নিয়ে যে-কেউ লিখতে পারেন এই ব্লগে। এসব বিষয়ে কারও কোনো প্রশ্ন থাকলে তাও লিখতে পারেন। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজব।

সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১২

সর্বস্তরে বাংলা ভাষা : আটকে আছে কেন?

বর্তমান পৃথিবীতে প্রচলিত প্রায় তিন হাজার ভাষার মধ্যে বাংলা একটি সমৃদ্ধতর ভাষা। সারা বিশ্বের বহু ভাষাভাষী লোকের মধ্যে বাংলাভাষীর সংখ্যাও উল্লেখ করার মতো। সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বর্তমানে সারা পৃথিবীতে প্রায় ত্রিশ কোটি লোকের মাতৃভাষা বাংলা। ভাষিক জনগোষ্ঠীর হিসাবে এটি পৃথিবীর চতুর্থ বা পঞ্চম ভাষা। বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। ছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক ভাষা বাংলা। ত্রিপুরার প্রধান প্রশাসনিক ভাষা এবং ঝাড়ঝণ্ড আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকার অন্যতম প্রশাসনিক ভাষা বাংলা। তা ছাড়া বাংলাভাষীদের জোর প্রচেষ্টায় জাতিসংঘের একটি প্রশাসনিক ভাষা হিসেবেও শিগগিরই বাংলা স্বীকৃতি পাবে বলে আশা করি। কিন্তু এই উপমহাদেশে মাতৃভাষা হিসেবে বাংলাকে নিয়ে গর্ব করার মতো জাতি আমাদের মতো আর একটিও নেই। কারণ একমাত্র আমাদের রাষ্ট্রভাষাই বাংলা। আর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শুধু বাংলার দামাল ছেলেরাই প্রাণ দিয়েছে। ছাড়া বাঙালির ভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তাই এক কথায় বলতে গেলে মাতৃভাষা বাংলা নিয়ে আমাদের অহঙ্কারের জায়গার অভাব নেই।
তারপরও অসম্পূর্ণতা থেকে যায়। সেই অসম্পূর্ণতা মাতৃভাষা বাংলাকে যথাযোগ্য সম্মানের আসনে বসাতে না পারার। সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা চালু না করতে পারার। আমাদের উচ্চশিক্ষা, আইন-আদালত বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে এখনও আমরা বাংলার ব্যবহার ঠিকমতো শুরুই করতে পারিনি। অথচ সময় বয়ে গেছে অনেক। বাংলা রাষ্ট্রভাষা হওয়ার ৬০ বছর পেরিয়ে গেছে। ১৯৭১- স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার চালু করতে হবে। এজন্য তখনই কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষেত্রে আমাদের তেমন কোনো অর্জন বা অগ্রগতি নেই। সর্বস্তরে বাংলা চালুর প্রশ্ন এলেই যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো হয় পরিভাষার অভাবকে। অথচ যুক্তি একেবারেই মূল্যহীন। সর্বস্তরে বাংলা চালুর জন্য পরিভাষার অভাব যতটা না দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী আমাদের দায়িত্বশীলদের অনীহা।
পরিভাষা নিয়ে পণ্ডিতরা নানা ধরনের কথা বলেন। কিন্তু পরিভাষা তৈরি করে সর্বস্তরে বাংলা চালুর চেষ্টা হবে নিতান্তই হাস্যকর উদ্যোগ। এতে করে সমস্যার সমাধান না হয়ে বরং সমস্যা আরও বাড়বে। প্রশ্ন আসতে পারে, ইংরেজি বা বিদেশি শব্দের পরিভাষা তৈরি না করে কীভাবে সম্ভব বাংলা চালু করা? তাহলে সেই বিদেশি শব্দগুলোর কী হবে? ব্যাপারে আমার মতামত স্পষ্ট। বিদেশি শব্দ যেভাবে চালু আছে ঠিক সেভাবেই থাকবে। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। কম্পিউটার, মাউস, প্রিন্টার, ইন্টারনেট-এসব শব্দের কি কোনো পরিভাষার প্রয়োজন আছে? এগুলোর পরিভাষা তৈরি মানে পণ্ডিতদের মাথা নষ্ট করা, আর ভাষাকে আরও জটিল করে তোলা। এর আগে অক্সিজেনের পরিভাষা করা হয়েছিল অম্লজান। হাইড্রোজেনের পরিভাষা উদযান। নাইট্রোজেন হচ্ছে যবক্ষারযান। শব্দগুলো বাংলায় চলেনি বরং বাংলায় এখনও অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন- চালু আছে। চালু যে আছে তাতে বাংলা ভাষার মর্যাদাও এতটুকু নষ্ট হয়নি। শব্দগুলো বুঝতে কারও কোনো অসুবিধা হয়নি বা হচ্ছে না। তেমনিভাবে আজকাল শুরু হয়েছে মোবাইল বা সেলফোনের বাংলা মুঠোফোন। শব্দটা বেশ প্রচলিতও হয়েছে আজকাল। কিন্তু ইংরেজিকে কি বাদ দেওয়া গেছে? কই, ফোন তো ফোনই রয়ে গেছে। এসব শব্দের বাংলা চালু করতে গেলে আজকাল বরং সমস্যা বাড়বে। আমাদের দেশের হাজার হাজার অশিক্ষিত ছেলে আজকাল কাজের জন্য বিদেশে যায়। তারা যদি মুঠোফোন শব্দটি শিখে বিদেশে যায় তাহলে সেখানে গিয়ে সেলফোন শব্দটা সে বুঝবে না। তেমনি ইন্টারনেট শব্দটা জানা থাকলে সেখানেও সে ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু সে যদি শুধু আন্তর্জাল শব্দটা শিখে বিদেশে যায় তাহলে ইন্টারনেট শব্দটা সে বুঝবেও না, কাউকে বোঝাতেও পারবে না। তা ছাড়া ইন্টারনেট শব্দের নেট দিয়ে জাল বোঝায় না, বোঝায় নেটওয়ার্ক। আবার কম্পিউটার শব্দটির যদি কোনো উদ্ভট বাংলা আমরা দাঁড় করাই, একই সমস্যায় পড়তে হবে আমাদের। আমাদের বোঝা উচিত, সমৃদ্ধ ভাষা হচ্ছে বহমান নদীর মতো। নদীর স্রোত যেমন তার চলার পথে দুই তীর হতে গ্রহণ-বর্জন করতে করতে এগিয়ে যায়, ভাষাও তেমনি দিনে দিনে নতুন নতুন শব্দ আহরণ করে আর কিছু শব্দের রূপ পাল্টে নিয়ে এগিয়ে চলে। জোর করে একে আটকে রাখা যায় না। আর বাংলা ভাষার সমৃদ্ধির মূলেই তো রয়েছে বিদেশি ভাষা থেকে প্রচুর শব্দ আহরণ এবং আত্তীকরণের সক্ষমতা। ব্যাকরণের ভাষায় একে বলে কৃতঋণ শব্দ। ইংরেজি ইনজেকশন, কফিন, করিডোর, কলেরা, কলোনি, টিকিট, চেয়ার, টেবিল, কেটলি, গ্লাস, কার্পেট, কার্বন, ডিক্রি, নবিস, ফুটবল, পিয়ন, টেলিফোন, পুলিশ, ট্রাফিক সিগন্যাল; হিন্দি চাটনি, চিড়িয়া, চিঠি, কলিজা, কুত্তা, ঘাটতি, চপ্পল, ছিনতাই; পারসিয়ান আমদানি, আস্তানা, গোয়েন্দা, চাদর, চামচ, চাকু, চাপাতি, চিকন, সাদা, শুরুয়া, আন্দাজ, হাঙ্গামা, দরিয়া, দরবেশ, জোয়ান, কারচুপি, পোশাক, দাদন; আরবি খারিজ, কামিজ, তাগাদা, জবাব, শুরু, ঈদ, উকিল, এজলাস, কদর, কবর, কর্জ, মজুদ, হিসাব; উর্দু গোলমাল, গুমর, খাড়া; ফারসি রেস্তোরাঁ, রেনেসাঁস; তুর্কি কাবু, চাকু, বন্দুক- রকম শত শত বিদেশি শব্দ কখন যে একান্ত আমাদের শব্দ হয়ে গেছে আমরা টের পাইনি। অতএব ইদানীংকার কম্পিউটার, ইন্টারনেট, কিবোর্ড, মাউস, মোডেম শব্দগুলোও যদি বাংলা হয়ে যায় তাতে সমস্যা কোথায়? এসব শব্দ ঠিক রেখেও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করা যায়। প্রশ্ন আসতে পারে, এসব শব্দ ঠিক রেখে সর্বস্তরে বাংলা চালু করা হবে কীভাবে এবং তাতে কী লাভ? আমাদের দেশে ব্যাংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের দরকারি কাগজপত্র তৈরি হয় ইংরেজিতে। এতে সাধারণ মানুষের সমস্যার শেষ থাকে না। যেমন, একজন অল্পশিক্ষিত মানুষ ব্যাংকে গেল অ্যাকাউন্ট খুলতে অথবা জীবন বীমা করতে। তার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল ইংরেজিতে লেখা কিছু নিয়ম-কানুন। আমরা সবাই জানি, আমাদের দেশের অশিক্ষিত মানুষ তো দূরের কথা, মোটামুটি শিক্ষিত মানুষও এসব ইংরেজির অর্থ বুঝতে পারে না। অথচ এগুলো যদি বাংলায় লেখা থাকত এবং তার মাঝে মাঝে যদি চেক বই, ফরম, নোট- রকম বিদেশি শব্দগুলো এভাবেই থাকত তাহলে তার বুঝতে কোনো অসুবিধা হতো না। বরং এসব ক্ষেত্রে যেটা করা হয়, ছোট ছোট অক্ষরে জটিল ইংরেজিতে যেসব নিয়ম-কানুন থাকে সেটা মূলত এইসব ইংরেজি না জানা সাধারণ লোকদের ঠকানোর জন্যই করা হয়। তাই সর্বস্তরে বাংলা চালুর আগে এসব ক্ষেত্রে আইন করে বিদেশি ভাষা বর্জন করা দরকার। এমনকি বিদেশি যেসব কোম্পানি দেশে ব্যবসা করছে তাদেরকেও আইন মানতে বাধ্য করা দরকার। এমনি উচ্চ আদালতে রায়টা যদি বাংলায় লেখা হয় আর তাতে অ্যাডভোকেট, কোর্ট, এজলাস ইত্যাদি বিদেশি শব্দ থাকে তাতে সাধারণ মানুষের সেগুলো বুঝতে কোনো অসুবিধা হবে না।
আমাদের মনে রাখা দরকার, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে যারা বুকের রক্ত দিয়ে বাংলাকে আমাদের রাষ্ট্রভাষা করেছিলেন তারা সবাই ছিলেন সাধারণ জনগণ। তারা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া ১৪৪ ধারা ভেঙেছিলেন, তাদের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনীর গুলির মুখে বুক পেতে দিয়েছিলেন। সেদিনের অকুতোভয় ভাষাসংগ্রামীদের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের বাসনা ছিল না, পদ-পদবির মোহ ছিল না। যে ছাত্রাবাস বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তারা মিছিল নিয়ে গিয়েছিলেন, মিছিল শেষে সেখানেই ফিরে গেছেন। জনারণ্য থেকে আসা মানুষ আবার জনারণ্যেই মিশে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ছাত্রছাত্রী যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন সাধারণ শ্রমজীবী মানুষও। ছিলেন গৃহবধূ থেকে রিকশাচালক, রাস্তার ছিন্নমূল হকার থেকে সাধারণ শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ। আর সেই আন্দোলনের পথ ধরেই একাত্তরে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন একটি দেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল। এই স্বাধীন দেশে আজ পর্যন্ত অন্তত সাধারণের ব্যবহারের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বাংলা চালু করতে না পারা বুকের রক্ত দেওয়া সেইসব সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।
ওপরের আলোচনা থেকে প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে আমরা সব বিদেশি শব্দই বাংলায় ব্যবহার করব? না, তা কখনও নয়। যেসব শব্দের বাংলায় প্রচলিত শব্দ আছে সেগুলোর ক্ষেত্রে আমরা বাংলা শব্দই ব্যবহার করব। তবে বিশ্বব্যাপী নতুন নতুন বিজ্ঞানের যেসব পণ্য এবং নাম আসছে সেগুলোর আমরা নতুন করে প্রতিশব্দ তৈরি করব না। আবার কিছু কিছু শব্দের প্রতিশব্দ এমনি এমনিই তৈরি হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষই এগুলো তৈরি করবে। অ্যারোপ্লেনের প্রতিশব্দ উড়োজাহাজ কোনো পণ্ডিত ব্যক্তি গবেষণা করে বের করেননি। বোম্ব থেকে বোমা, জেনারেল থেকে জাঁদরেল শব্দগুলোও সাধারণ মানুষই তৈরি করেছে। রকম প্রতিশব্দ তৈরি হতেই থাকবে। তবে ধীরে ধীরে। এবং সাধারণ মানুষই দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতে করতে এসব শব্দ তৈরি করবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলায় বেশ কিছু পরিভাষা চালু করতে সক্ষম হয়েছেন। এসব শব্দ যে পরিভাষা সেটা আজ আর সাধারণ পাঠকদের মনেই হয় না। আবাসিক, অনাবাসিক, অনীহা, অতিপ্রজ, অপপাঠ, আঙ্গিক, ঊনতা, আবশ্যিক, ঐচ্ছিক, জনপ্রিয়, নাব্য, প্রতিলিপি, যথাযথ, সংলাপ ইত্যাদি তার তৈরি পরিভাষা। এগুলো ছাড়াও বেশ কিছু শব্দের পরিভাষা তিনি করেছিলেন যেগুলো আজ বাংলায় চলছে। তবে একটা দিকে বিশেষ খেয়াল করা যেতে পারে যে, কোনো শব্দের বিপরীতে একটা নতুন পরিভাষা বানালেই মানুষ গ্রহণ করছে না। বাংলায় সুন্দর অর্থযুক্ত শব্দ চালু করলে সেটা পরিভাষা হিসেবে টিকে যাচ্ছে। আর জোর করে একটা কিছু চালু করতে গেলে সেটা হারিয়ে যাচ্ছে। তাই ক্ষেত্রে জোর করে কোনো কিছু করা যাবে না। দিনে দিনে ভাষার যে রকম পরিবর্তন আসছে, সেভাবে পরিভাষাও আস্তে আস্তে তৈরি হবে, মানুষ গ্রহণ করবে। বাংলাকে বেশি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে ইংরেজি বা অন্য ভাষার শব্দকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বোকামি। আজকাল বাংলা বাক্যে বিদেশি শব্দের ব্যবহার দেখলে অনেকেই তাকেবাংলিশবলে উল্লেখ করছেন। কিন্তু বিদেশি শব্দের ব্যবহার মানেই বাংলিশ নয়। যদি সেটা হতো তাহলে বাংলা ভাষা আর এতটা সমৃদ্ধ তো দূরের কথা, বাংলা ভাষায় কথা বলাই দুরূহ হয়ে যেত। তবে প্রকৃতই বাংলিশ যে বাংলায় চলছে না তা নয়। একটা উদ্ধৃতি দেওয়া যাক, উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে এম মনিরুজ্জামানের একটি লেখা থেকে : ‘আমি প্রাকটিক্যালি বিষয়ে টোটালি ইগনোরেন্ট। উনি রিকোয়েস্ট করেছেন বলেই ওঁকে বলেছিলাম, কে, আই উইল ডু ইট। কিন্তু আমার ফরম দ্য বিগেনিং বিষয়ে হেজিটেশন ছিল। এখন সবাই আমাকে ব্লেইম করছে কেন? অফ কোর্স আমি স্বীকার করছি যে আমার ওঁর ট্রাপে পা দেওয়া উচিত হয়নি। নাউ আই রিগ্রেট ইট। ধরনের বাংলা যারা বলেন, তাদের ভাবটা এমন, তারা পুরোপুরি বাংলা বলতে পারেন না এটা একটা গর্বের ব্যাপার। কিন্তু এটা অবশ্যই দোষের। ধরনের বাংলিশ ভাষাকে আমরা ঘৃণা করি। এদের উদ্দেশে আমরা বলতে পারি, ‘দেশী ভাষা বিদ্যা যারা মনে না জুয়ায়। নিজ দেশ ত্যাগি কেন বিদেশ যায়\’ এইসব বাংলিশকে অবশ্যই আমরা ঘৃণা করি। আমাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার কোনো যোগ্যতা তাদের নেই, কোনো অধিকার তাদের নেই। তারা যে বিদেশি ভাষাকে ভালোবাসে, সেই দেশে গিয়ে তাদের থাকা উচিত। তবে বাংলায় প্রচলিত বিদেশি শব্দকে আমরা ঘৃণা করব না। কারণ, আগেই উল্লেখ করেছি, বাংলা ভাষার সমৃদ্ধির মূলেই আছে বিদেশি ভাষা থেকে প্রচুর শব্দ আত্মস্থ করার ক্ষমতা।
আসছে একুশে ফেব্রুয়ারি। এই দিনে আমরা ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে যাব, অর্ঘ্য হাতে প্রভাতফেরিতে অংশ নেব। কিন্তু তার চেয়েও জরুরি হল, যে ভাষার জন্য তারা জীবন দিয়েছেন, সেই ভাষার মর্যাদা অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সেটিই হবে ভাষাশহীদদের প্রতি যথাযথ সম্মান করা। এটা করতে না পারলে আমরা ভাষাশহীদদের রক্তঋণ শোধ করতে পারব না। আমরা হব অকৃতজ্ঞ জাতি। আমরা নিশ্চয় অকৃতজ্ঞ থাকতে চাই না। তাই অচিরেই প্রয়োজন সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা চালু করা। সেটা করতে গিয়ে যত বাধাই আসুক তা দূর করতে হবে। দূর করা সম্ভব।
[জহিরুল ইসলাম]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন