বাংলায় কোনো কিছু লিখতে গেলে আমরা অবধারিতভাবে যে সমস্যায় পড়ি সেটা হল বানান। পত্রপত্রিকার জন্য লেখার সময় এ নিয়ে খুব একটা না ভাবলেও চলে, কারণ পত্রিকায় এ বিষয়ে একদল দক্ষ লোক আছেন যারা যেকোনো লেখার বানান, বাক্যগঠন, ব্যাকরণ, এমনকি তথ্যগত কোনো ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলে সেগুলো ঠিক করে দেন। কিন্তু ব্লগে লেখার ক্ষেত্রে এ সুযোগটা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফলে ভুল লিখলে সেটা ভুলই চলে যায়।
বাংলা ব্যাকরণ আসলেই জটিল। সেই জটিলতার মধ্যে না গিয়েও আমরা অনেকটা নির্ভুল বাংলা লিখতে পারি। সেজন্য খুব বেশি পড়াশোনাও করতে হবে না। এখানে খুব সহজভাবে মাঝে মাঝে দুয়েকটা টিপস দেওয়া হবে যা অনুসরণ করে চললে লেখার ক্ষেত্রে ভুল হওয়া কমে যাবে অনেকটাই।
বাংলা লিখতে গিয়ে যে অক্ষর দুটো নিয়ে খুব বেশি সমস্যা হয় তা হচ্ছে মূর্ধন্য ণ এবং দন্ত্য ন। আজ এখানে মূর্ধন্য ণ এবং দন্ত্য ন নিয়ে আলোচনা করা হবে। মাত্র বিশ মিনিটে আয়ত্ত করার মতো এই টিপসটি মেনে চললে আমাদের নিত্যদিনের ভুলের বহর থেকে কমপক্ষে ৭০ ভাগ ভুল এবং ণ ও ন ব্যবহারে ভুলের ক্ষেত্রে ৯৮ ভাগ ভুল হওয়া কমে যাবে।
সাধারণভাবে ঋ র ষ বর্ণের পরে ণ ব্যবহূত হয়।
ঋ-এর দুটি রূপ আছে। যথা, ঋ এবং ঋ-কার। এই দুটো রূপের পরেই ণ হবে। ঋণ ঘৃণা তৃণ মৃণাল।
র-এর তিনটি রূপ আছে। যথা র, রেফ, র-ফলা। এই সবগুলো রূপের পরেই ণ হবে। যেমন : কারণ ধারণ মরণ অরণ্য আহরণ উদাহরণ সাধারণ; কর্ণ চূর্ণ দীর্ণ পর্ণ অর্ণব পূর্ণিমা বিশীর্ণ; ঘ্রাণ প্রণয় প্রাণ যন্ত্রণা ভ্রূণ মিশ্রণ স্ত্রৈণ।
তবে সন্ধি, সমাস ও উপসর্গের
ক্ষেত্রে এ নিয়ম খাটবে না। যেমন : অহঃ+নিশ=অহর্নিশ, ত্রিনয়ন=তিন নয়ন যার, পরি+বহন=পরিবহন, দুঃ+নীতি=দুর্নীতি ইত্যাদি। এমনিভাবে দুর্নিবার, দুর্ধর্ষ, দুর্দশা, দুরন্ত ইত্যাদি।
ষ : ষণ্ড, ঘর্ষণ, দূষণ, বিষাণ, অন্বেষণ, নিষ্পেষণ, ভাষণ, বিষ্ণু ইত্যাদি।
ক্ষ (ক+ষ) : ক্ষণ, ক্ষণিক, ক্ষীণ, ঈক্ষণ, সমীক্ষণ, লক্ষণ ইত্যাদি।
ক্ষ (ক+ষ) : ক্ষণ, ক্ষণিক, ক্ষীণ, ঈক্ষণ, সমীক্ষণ, লক্ষণ ইত্যাদি।
ওপরের যে অক্ষরগুলোর পরে ণ হয়, সে অক্ষরগুলোর
পরে যদি ক খ গ ঘ ঙ এবং প ফ ব ভ ম বসে এবং তার পরে যদি ন থাকে সেটিও
মূর্ধন্য ণ হবে। যেমন : রোপণ শ্রাবণ অর্পণ কৃপণ গ্রহণ ভ্রাম্যমাণ শ্রবণ ব্রাহ্মণ ইত্যাদি।
ওপরের অক্ষরগুলোর
পরে যদি অয়ন বা আয়ন শব্দটি যুক্ত হয় সেখানেও ণ হয়ে যায়। যেমন : উত্তরায়ণ পরায়ণ নারায়ণ রামায়ণ ইত্যাদি।
এই নিয়মের মধ্যে পড়ার পরেও দন্ত্য ন ব্যবহার হবে যেসব ক্ষেত্রে : সকল অতত্সম অর্থাত্ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দের ক্ষেত্রে ন ব্যবহূত হবে। ভয় পাওয়ার কারণ নেই। আমাদের
নিত্যব্যবহার্য শব্দের মধ্যে
ঝরনা, রানী, পুরনো, ধরন, শিহরন এই শব্দগুলো মনে রাখলেই চলবে। তা ছাড়া বিদেশি শব্দ তো বোঝাই যায় যেমন কোরান, আয়রন ইত্যাদি।
যুক্তাক্ষরের ক্ষেত্রে ট ঠ ড ঢ-এর সঙ্গে ণ (যেমন : ঘণ্টা কণ্টক নিষ্কণ্টক বণ্টন অবগুণ্ঠন লুণ্ঠন কণ্ঠ লণ্ডভণ্ড খণ্ড দণ্ড ভণ্ড কাণ্ড ঝাণ্ডা ভাণ্ড চণ্ডী ইত্যাদি)
এবং ত থ দ ধ-এর সঙ্গে ন (যেমন : অন্ত, শান্ত, প্রান্ত, গ্রন্থ, পন্থা, স্পন্দন, গন্ধ, বন্ধন, সন্ধ্যা ইত্যাদি) বসবে। এক্ষেত্রেও বিদেশি
শব্দে ণ বর্জন
করতে হবে।
হসন্ত-উচ্চারণ থাকলেও এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। যেমন : শ্রীমান।
এ ছাড়া গণ ধাতুযোগে গঠিত শব্দসমূহে ণ হবে। যেমন : গণিত, গণনা, গণ্য, গণত্কার, গণশক্তি, জনগণ, গণসংগীত।
কতকগুলো শব্দে স্বভাবতই মূর্ধন্য ণ হয়। এই শব্দগুলো মনে রাখা ছাড়া উপায় নেই : কণা নিক্বণ ফণা চিক্কণ কণিকা গণিকা কাণ উকুণ মণি কঙ্কণ বাণ শাণ কল্যাণ পিণাক কফোণি লাবণ্য ফণী বণিক নিপুণ পাণি চাণক্য পণ মাণিক্য গণ বীণা বেণু বেণী বাণী গুণ তূণ ঘুণ অণু বাণিজ্য কিণ কোণ পুণ্য গৌণ লবণ পণ্য ভণিতা শোণিত শোণ স্থাণু শণ ভাণ আপণ বিপণি।
[জহিরুল ইসলাম]
স্যার, পর্ণ শব্দের অর্থটা কি? পুরো গুগল ঘেটে এর শালীন কোনো অর্থ আমি পাইনি। খোঁজার কারন হলো আমাদের এলাকার একটি বাড়ির নাম "পর্ণ কুটির"। অবশ্যই এর কোনো ভালো অর্থ আছে। নইলে বাডির নাম নিশ্চয়ই দেয়া হত না...
উত্তরমুছুন