বিভাবনায় লিখতে পারেন যে-কেউ

বাংলা ভাষা, ব্যাকরণ, উচ্চারণ বানান নিয়ে যে-কেউ লিখতে পারেন এই ব্লগে। এসব বিষয়ে কারও কোনো প্রশ্ন থাকলে তাও লিখতে পারেন। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজব।

সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১২

উচ্চারণ বিষয়ক কয়েকটি টিপস

রমিজ্যা, দুফুরে বাত লইয়া খ্যাতে যাইস কোলো, মোর বাড়ি আওনের সোমায় অইবে নানে।কথাগুলো বরিশাল অঞ্চলের একজন চাষির। এই লোকটি যে ভাষায় কথা বলছেন এটা তার জন্য পুরোপুরিই মানানসই। শুধু মানানসই বললে ভুল হবে, তিনি যে ভাষায় কথা বলছেন তাতে বাংলা ভাষার কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। কিন্তু একজন টিভি অভিনেতা বা অভিনেত্রী যদি দিনের পর দিন, নাটকের পর নাটকে খাইতেছি যাইতেছি শুনতাছি জাতীয় শব্দ বলতে থাকেন তাহলে বলা যায় তিনি বাংলা ভাষার ক্ষতিই করছেন। কারণ তার বলা উচিত ছিল প্রমিত উচ্চারণে বাংলা ভাষা, যার মাধ্যমে আরেকজন লোক প্রমিত উচ্চারণ শিখতে পারবেন। কিন্তু অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে কিছুদিন আগে এক টিভি অনুষ্ঠানে একজন নায়িকার উপস্থিতি দেখে আমি নিজেই আগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম যে জনপ্রিয় এই নায়িকাটি কি শুধু পরিচালকের অনুরোধেই ধরনের সংলাপ বলেন, নাকি আসলেই তিনি শুদ্ধ বাংলা বলতে পারেন না!
আজকাল চলতে-ফিরতে, আলাপ-আলোচনায়, টেলিভিশন-এফএম রেডিও-মঞ্চনাটক-যেখানেই যা কিছু শুনি, সবকিছুতেই উচ্চারণত্রুটি। বিশ্বাস হচ্ছে না? টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের দিকে খেয়াল করুন। গোটা দশেক বিজ্ঞাপনে ব্যবহার হয়নিশ্চিতশব্দটি। সব জায়গায়ই বলা হয় নিশ্চিত্। আর যারা এই শব্দটির ভুল উচ্চারণ করেন তাদের মধ্যে রয়েছেন সংবাদপাঠক, সংবাদপরিবেশক, জনপ্রিয় মডেল, তারকাসহ অনেকে। আসলে শব্দটার উচ্চারণ নিশ্চিতো। অব্যাহত-কে বলা হয় ওব্যাহত। আরও অনেক অনেক। সেসব নিয়ে সমালোচনা করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। সামান্য কয়েকটি দিকে খেয়াল রেখে কীভাবে সর্বোচ্চ উচ্চারণত্রুটি এড়ানো যায় সে লক্ষ্যেই লেখা।
-কার বা -কারযুক্ত অক্ষরের আগের অক্ষরের উচ্চারণ ওকারান্ত হবে। যেমন আমরা যতি লিখলেও পড়ব যোতি। এমনিভাবে : মতি অতি ক্ষতি অধিকার অতীত অতিরিক্ত লিখলেও পড়তে হবে মোতি যোতি ওতি ক্ষোতি ওধিকার ওতীত ওতিরিক্ত ইত্যাদি।
-কার বা -কারযুক্ত অক্ষরের আগের অক্ষরের উচ্চারণ হবে ও। যেমন গরু লিখলেও পড়তে হবে গোরু। এমনিভাবে : নতুন-নোতুন, মরু-মোরু, সরু-সোরু, তরু-তোরু, পড়ুয়া-পোড়ুয়া, বড়ুয়া-বোড়ুয়া।
-ফলাযুক্ত অক্ষরের আগের অকারান্ত অক্ষরের উচ্চারণ ওকারান্ত হবে। সহ্য লক্ষ্য কল্যাণ অধ্যায় অধ্যাপক অন্যান্য ইত্যাদি লিখলেও পড়তে হবে সোহ্য লোক্ষ কোল্যাণ ওধ্যায় ওধ্যাপক ওন্যান্য।
কোনো নিয়মের অর্ধেকটা জানা থাকলে এবং বাকি অর্ধেকটা না জানা থাকলে সেটা আরও ভয়ঙ্কর। -ফলাযুক্ত অক্ষরের আগের অক্ষর বা -কারযুক্ত অক্ষরের আগের অক্ষর ওকারান্ত উচ্চারণ হবে, কেবল এইটুকু জেনেই অনেকে উচ্চারণ করেন ওব্যাহত। আসলে নঞর্্থক -এর উচ্চারণ - থাকবে, সেটা হবে না। যেমন : অব্যাহত=-ব্যাহত, +ন্যায়=-ন্যায়, +বিবাহিত=-বিবাহিত।  
ক্ষ-এর আগের অক্ষরটির উচ্চারণ হবে ওকারান্ত হবে। অক্ষর লক্ষ দক্ষ পক্ষ লিখলেও উচ্চারণ করতে হবে ওক্ষর লোক্ষ দোক্ষ পোক্ষ।
দুটো শব্দ মিলে একটি নতুন শব্দ তৈরি হলে প্রথম শব্দের শেষ অক্ষরটি অকারান্ত হলেও উচ্চারণ হবে ওকারান্ত। যেমন : লোক+গান=লোকগান (উচ্চারণ হবে লোকোগান), এইভাবে লোককবি (লোকোকবি), কাল+রাত=কালরাত (উচ্চারণ কালোরাত), কাল-স্রোত=কালস্রোত (কালোস্রোত), দেশ+বাসী (দেশোবাসী)

আমি নিজে কোনো উচ্চারণবিশারদ নই। তবু নিজের জানা বিষয়গুলো থেকে এই টিপসগুলো দেওয়ার চেষ্টা করলাম। আমার কোনো ভুল হয়ে থাকলে বা এর বাইরেও সহজ কোনো নিয়ম-কানুন কারও জানা থাকলে শেয়ার করতে পারেন। নতুন কিছু জানাতে পারলে আমিও উপকৃত হব।
[জহিরুল ইসলাম]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন