বিসর্গ/কোলন
বিসর্গ (ঃ) লম্বালম্বিভাবে অবস্থিত ক্ষুদ্রাকার দুটি বৃত্ত। এটি একটি বর্ণ। অন্যদিকে কোলন (:) লম্বালম্বিভাবে অবস্থিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুটি বিন্দু। এটি একটি যতিচিহ্ন। একটির ক্ষেত্রে অন্যটির ব্যবহার কঠোরভাবে বর্জন করা উচিত। কিন্তু অনেকেই এ দুটোর ব্যবহার ঠিকমতো করতে পারেন না। অথবা এ দুটো যে সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস সেদিকে খেয়াল রাখেন না। তাদের ধারণা, যে-কোনো একটা দিলেই কাজ চলে যাবে।
বিসর্গ বাংলা অনেক শব্দগঠনের প্রয়োজনীয় বর্ণ। যেমন, নিঃস্ব, অন্তঃস্থ, ইতঃপূর্বে, দুঃস্বপ্ন ইত্যাদি। যদিও পদান্তের বিসর্গ এখন আর ব্যবহার করা হয় না। যেমন, কার্যতঃ, প্রধানতঃ না লিখে এখন লেখা হয় কার্যত, প্রধানত। বাংলা শব্দসংক্ষেপ করতেও বিসর্গ ব্যবহার করা হয়। যেমন মোহাম্মদ-এর সংক্ষেপ মোঃ। এভাবে আঃ (আবদুল), সাঃ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), দঃ (দরুদ) ইত্যাদি। ইংরেজিতে মূলত ফুলস্টপ (.) দিয়ে শব্দসংক্ষেপ করা হয়। ডক্টর না লিখে ড. লেখা যায়, তেমনি লে. জে. (লেফটেন্যান্ট জেনারেল)
ইত্যাদি। তবে ইদানীং অনেকে বাংলা শব্দও ফুলস্টপ দিয়ে সংক্ষেপ করেন। এটা অনুচিত হলেও আগামীতে হয়তো মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। যেমন, মোহাম্মদ-এর সংক্ষেপ মোঃ না লিখে অনেকেই লিখছেন মো.। তবে এক্ষেত্রে বিসর্গের জায়গায় কোলন কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। মোঃ না লিখে মো: কোনোভাবেই চলবে না।
হাইফেন/ড্যাশ
হাইফেন ও ড্যাশ দুটোই আড়াআড়ি সরলরেখা। তবে ড্যাশ আকারে হাইফেনের তিনগুণ। বাংলা ফন্ট যারা তৈরি করেছেন তাদের অসতর্কতার কারণে যারা এ দুটোর ব্যবহার জানেন তাদের জন্যও সমস্যা হয়ে যায় এই জন্য যে অধিকাংশ ফন্টেই এ দুটো প্রায় কাছাকাছি সাইজে বানানো হয়েছে। ড্যাশ যদি হয় বারো এম তবে হাইফেন হওয়া উচিত চার এমন। কিন্তু অধিকাংশ বাংলা ফন্টে ড্যাশ ছয় এমের ওপর নেই। যার জন্য ড্যাশ ব্যবহার করলেও এগুলোকে হাইফেনই মনে হয়। দৈনন্দিন কাজ এটি দিয়ে চালিয়ে নেওয়া গেলেও কোনো ভালো প্রকাশনার বারোটা বাজিয়ে দেয় এই ড্যাশ। বিশেষ করে কবিতার ক্ষেত্রে। তাই ড্যাশ যখন ব্যবহার করবেন ফন্ট যদি সেটা সাপোর্ট না করে তবে ম্যানুয়ালি ড্যাশটাকে বড় করে দিন। এমএস ওয়ার্ডে ফর্ম্যাট মেনুর ফন্টে গিয়ে স্কেলিং ২০০
বা ২৫০ পার্সেন্ট করে দিন। কোয়ার্কএক্সপ্রেস বা অন্য কোনো প্রোগ্রাম ব্যবহার করলে সেখানেও স্কেলিং চেইঞ্জ করার ব্যবস্থা আছে। ড্যাশ এবং হাইফেনের কোনোদিকেই কোনো স্পেস ব্যবহার করা উচিত না।
উদ্ধৃতি-চিহ্ন
অতিরিক্ত উদ্ধৃতি-চিহ্ন ব্যবহারের প্রবণতা আছে অনেকেরই। এটা ঠিক নয়। তিনি স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন। এখানে যদি লেখা হয়, তিনি ‘স্ত্রী’কে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন,
তবে বুঝতে হবে এটা আসলে স্ত্রী নয়, এর ভেতর অবশ্যই কোনো কিন্তু আছে। তাই অতিরিক্ত উদ্ধৃতি-চিহ্ন ব্যবহার না করাই ভালো। অনেকে ইংরেজি শব্দ পেলেই উদ্ধৃতিচিহ্ন দিয়ে সেটিকে আটকে দেন। এটাও ঠিক নয়। যেখানে উদ্ধৃতিচিহ্ন ব্যবহার না করলে উদ্ধৃতাংশ বুঝতে অসুবিধা হয় শুধু সেখানেই উদ্ধৃতিচিহ্ন ব্যবহার করা উচিত। উদ্ধৃতিচিহ্ন যদি দুটি ঊর্ধ্বকমা
(“) দিয়ে শুরু হয় সেটি শেষও হবে দুটি ঊর্ধ্বকমা
(”) দিয়ে। উদ্ধৃতির মধ্যে উদ্ধৃতি থাকলে সেখানে একটি উদ্ধৃতি-চিহ্ন বসানো যায়। বাক্যের ভেতরে বাক্যাংশ উদ্ধৃত হলে যতিচিহ্নের আগে উদ্ধৃতিচিহ্ন বসবে। যেমন, ঢাকাকে বলা হয় ‘মসজিদের শহর’।
কোনো কোনো সময় তিনটি ঊর্ধ্বকমা একসঙ্গে ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে। সভার প্রধান অতিথি বললেন, “‘তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’- বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে আমরা সেদিন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম।” এভাবেও হতে পারে, সভার প্রধান অতিথি বললেন, “বঙ্গবন্ধুর এই বক্তব্য শুনে আমরা সেদিন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম,
‘তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।’”
কোনো উদ্ধৃতিতে অনেকগুলো প্যারাগ্রাফ থাকলে প্রতিটি প্যারাগ্রাফের শুরুতে উদ্ধৃতি-চিহ্ন ব্যবহার করতে হয়, কিন্তু শেষ করতে হয় একদম শেষ প্যারাগ্রাফের শেষে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন