অনেকেই মনে করেন, কি
এবং কী এটা
বাংলা ভাষায় নতুন
একটা উপদ্রব। আগে এসব
ছিল না। নব্য
পণ্ডিতরা এটা চালু
করেছেন। আসলে তা
নয়। আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের দিকে খেয়াল করুন।
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥/কী
শোভা, কী ছায়া
গো, কী স্নেহ,
কী মায়া গো—/কী আঁচল
বিছায়েছ বটের মূলে,
নদীর কূলে কূলে।...
দশ
লাইনের গানটিতে ছয়বার কী
শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। যারা কী-কে
নতুন আমদানি মনে করছেন
তাদের জন্য ব্যাপারটা তুললাম। অতএব আপনি
নিজে যদি কি
এবং কী-এর
ব্যবহার না জানার
কারণে এড়িয়ে যেতে
চান সেটা কোনোভাবেই ঠিক হবে না।
তুমি
কী জানো সে
আমার ঢের জানা
আছে।
তুমি
কি জানো সে
আমার কত প্রিয়!
এই
দুই কি-এর
মধ্যে আসলেই তফাত
আছে। আসুন জেনে
নিই কোথায় কি
লিখব আর কোথায়
কী।
বাক্যে যে কি-এর
ব্যবহার অপ্রয়োজনীয়, মানে ওই
বাক্যে কি শব্দটা না হলেও বুঝতে
কোনো সমস্যা হয় না
সেখানে কি লিখতে
হবে। যেমন : তুমিও
কি খাবে? তুমি
কি আমার সঙ্গে
যাবে? বাক্য দুটো
এভাবেও লেখা যেত
: তুমি খাবে? বা
তুমি আমার সঙ্গে
যাবে? এতে বাক্য
এবং অর্থ বোঝার
ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হতো না। অতএব,
যে কি বাক্যের মধ্যে না থাকলেও কোনো ক্ষতি নেই
তাকে হ্রস্ব ই-কার
দিয়ে লিখতে হবে।
আরও
একভাবে বোঝা যায়
হ্রস্ব ই-কারযুক্ত কি-এর ব্যবহার। যে কি-যুক্ত
বাক্যের উত্তর হ্যাঁ
বা না দিয়ে
দেওয়া যায় সেটা
হ্রস্ব ই-কার
দিয়ে লিখতে হবে।
যেমন : তুমি কি
যাবে? উত্তর হবে
: হ্যাঁ বা না
বলেই উত্তর দেওয়া
যাবে। তুমি কি
খাবে? এখানেও হ্যাঁ বা
না বলেই উত্তর
দেওয়া যাবে।
আর
যদি বলা হয়
: তুমি কী খাবে?
অর্থাত্ রুটি নাকি
ভাত নাকি অন্য
কিছু? এর উত্তর
কিন্তু কোনোভাবেই হ্যাঁ বা
না দিয়ে দেওয়া
যাবে না। বলতে
হবে : আমি ভাত
খাব। বা, আমি
রুটি খাব। অন্ততপক্ষে বলতে হবে, ভাত।
বা, রুটি।
কয়েকটি উদাহরণ :
তুমিও
কি যাবে?
সে
কি আসলেই আসবে?
তুমি
যাবে কি যাবে
না তার আমি
কী জানি?
আমি
কি ডরাই সখি
ভিখারি রাঘবে!
কী
পড়?
কী
খাবে?
কী
আর বলব?
কী
জানি?
এটা
কী বই?
পরীক্ষায় সাফল্যের উপায় কী?
কী
আনন্দ!
কী
বুদ্ধি নিয়ে এসেছিলে!
ছবিটা
কী রকম লাগল?
কী
করে এ কথা
বললে!
রূপ
দেখে বলব কী
ভাষা খুঁজে পাই
না।
কী
কথা তাহার সাথে,
তার সাথে?
কী
এমন পরিচয়, অনুমতি প্রার্থনা!
[জহিরুল ইসলাম]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন